
-'তোমাকে তো রাগিব ভাইয়ের কথা বলেছিলাম, মনে আছে?'
-'হুম...তো?'
-'তুমিতো জানো বাবা মায়ের পছন্দের ছেলে ও। আজ ওরা আসবে আমাকে দেখতে... হয়তো আজ ওরা কাবিন করতে পারে'
-'আমাকে বলার মানে কি?... মানে সকাল সকাল জরুরী তলব দিয়ে কি বলতে চাইছো?'
-'তোমাকে কতবার সিরিয়াস হতে বলছিলাম যে কিছু একটা করো... তুমি বলতে আমিতো সিরিয়াসলি তোমাকে ভালোবাসি...এটা কি যথেস্ট নয়?... আর কয়জন আছে যে তোমাকে আমার মতো ভালোবাসবে?... এখন কি করবে?...থাকো তোমার সিরিয়াস ভালোবাসা নিয়ে'
মেয়েটা রেগে মুখটা সরিয়ে নিলো ছেলেটার চোখের উপর থেকে। ছেলেটার অসহায় চোখ দু'টো ওর বুকটাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে। ওর একটা ভালোবাসার মন আছে কিন্তু এই নগরে তার কোন কি মূল্য আছে?... না নেই। মেয়েটা ছেলেটার হাত ধরে বলে, 'চলো... উঠো...আজ তোমাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দেব... হয়তো বা আর কখনোই দেখা হবে না...চলো'।
অনেক ব্যস্ত ঢাকার রাজপথ সাথে চারপাশের শব্দ। কিন্তু কোন শব্দ আজ কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না... একটা ঘোরের মধ্যে আছে যেন। দুঃস্বপ্ন চলছে... ঘুমটা ভাঙ্গলো বলে। সব আবার ঠিক হবে। নাহ্ হবে না। হাতে ওর দেয়া পাঞ্জাবির প্যাকেট। পকেটটাও ফোকলা হাসি দিয়ে হা হয়ে আছে। ২ টাকা আছে। হেঁটেই আজ ফিরবে তার মেসে। ওর কোথাও যাবার জায়গা নেই। তেল চিটচিটে হয়ে উঠা বালিশ আর বিছানার চাদর... আর একটু বসলে আর্তনাদ করে উঠা আমকাঠের বিছানা(!!!)। ঘামে ভিজে উঠেছে শার্টটা। ড্রেনের পচা পানিকে কোনমতে পা বাঁচিয়ে ৫ তলা বাড়ির সবচেয়ে উচুঁ তলায় তার বাস। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে ফেলে ঘরের তালাটা খুলে। মেঝেতে একটা নীল খামে চিঠি। এই রকম খামে সে গত দু'বছর চিঠি পাচ্ছে। মেয়েটা হয়তো ২-১দিন আগে লিখেছে। কিন্তু আজতো চিঠিতে নেই কোন ডাকঘর বা কুরিয়ার সার্ভিসের চিহ্ন। কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা পড়া শুরু করে ছেলেটা।
'প্রিয় আজ কোন নামে তোমাকে ডাকবো না। তোমার উপর আমার অনেক রাগ। একটু কি সিরিয়াস হবে তুমি আমার জন্য...'
ছেলেটার চোখ ভিজে যায়। নিজে কিছু করার তাগিদ অনুভব করে সে। খুব কি দেরি হলো তার?
'আজ ১লা এপ্রিল। হি: হি:। সকালটা তোমাকে ভড়কে দিলাম।
শোনো আজ আমি ঘর ছেড়েছি তোমার সাথে ঘর বাঁধব বলে। আমি মগবাজার কাজী অফিসের সামনে অপেক্ষায় আছি। অনেক রোদ... তাড়াতাড়ি চলে আস'